Header Ads

Header ADS

ব্রিটেনের রানির কাছ থেকে পুরস্কার নিলেন বাংলাদেশি তরুণ। (Bangladeshi youngsters received prizes from Britain's queen)


Bangladeshi youngsters received prizes from Britain's queen

ঘটনা কাল ঃ২৫শে জুন ২০১৬

পরনে লুঙ্গি-পাঞ্জাবি, গলায় গামছা আর পায়ে স্যান্ডেল—এমন চিরায়ত বাঙালি পোশাকে ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছ থেকে পুরস্কার নিলেন বাংলাদেশি তরুণ ওসামা বিন নূর। পুরস্কারের নাম কুইন্স ইয়াং লিডারস অ্যাওয়ার্ডস। গত বৃহস্পতিবার লন্ডনের বাকিংহাম প্রাসাদে এক জাঁকালো অনুষ্ঠানে কমনওয়েলথভুক্ত ৪৫টি দেশ থেকে আসা উদীয়মান ৬০ তরুণ নেতৃত্বের হাতে পুরস্কার তুলে দেন রানি।

ওসামা একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে রানির ৯০তম জন্মদিন উপলক্ষে দেওয়া এই অ্যাওয়ার্ড জিতে নেন। বাংলাদেশের তরুণদের আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বৃত্তি, প্রশিক্ষণ, পুরস্কারসহ নানা সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানাতে ইয়াং অপরচুনিটিজ নামে একটি পোর্টাল খুলেছেন ওসামা। তিনি এটির সহপ্রতিষ্ঠাতা। এ ছাড়া ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশের সম্পদ সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করা ওসামা রেডিওতে তরুণদের জন্য তিন টেক্কা নামের একটি অনুষ্ঠানও সঞ্চালনা করেন।ব্রিটিশ রানির দেওয়া অ্যাওয়ার্ড জিতে নেওয়া ওসামার বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরার আদিয়াবাদ ইউনিয়নের সিরাজনগর নয়াচর গ্রামে। নূরুল ইসলাম ও আঁখি নূর বেগমের চার সন্তানের মধ্যে ওসামা দ্বিতীয়। এই তরুণ ঢাকার আপডেট ডেন্টাল কলেজের দন্তচিকিৎসা বিষয়ের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

ওসামা প্রথম আলোকে বলেন, বাকিংহাম প্রাসাদের অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিক পোশাক অথবা নিজস্ব সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করে যেতে বলা হয়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, স্যান্ডেল পরিধানের পাশাপাশি গলায় গামছা ঝোলান। বাঙালির অকৃত্রিম পোশাকের ঐতিহ্যকে রানির সামনে তুলে ধরার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি তিনি। অবশ্য লুঙ্গি পরার ভিন্ন একটি কারণও ব্যাখ্যা করেছেন।

ওসামা বলেন, ‘বাংলাদেশে অনেক অফিস, মার্কেট কিংবা রেস্তোরাঁয় মানুষকে লুঙ্গি পরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। এমনকি ঢাকার একটি এলাকায় লুঙ্গি নিষিদ্ধ করার চেষ্টা হয়েছে। এক কথায় লুঙ্গি পরা ব্যক্তিকে তাচ্ছিল্যের চোখে দেখা যায়। অথচ লুঙ্গি পরেননি এমন পুরুষ বাংলাদেশে পাওয়া যাবে না।’

ওসামা বলেন, অনুষ্ঠানে আসা যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ হাইকমিশনের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার খন্দকার এম তালহা ওসামাকে দেখে বলেন, ‘তোমাকে খুঁজে পেতে আমার মোটেই কষ্ট হয়নি।’
বাঙালি পরিচয়ের ধারক ঐতিহ্যবাহী এই পোশাকের প্রতি তাচ্ছিল্যপূর্ণ মনোভাব পরিবর্তন করার লক্ষ্যে ওসামা রানির অনুষ্ঠানে লুঙ্গি পরার সিদ্ধান্ত নেন। ওসামা বলেন, অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করতে গিয়ে দুবার রানির সঙ্গে হাত মেলানোর সুযোগ হয়েছে তাঁর। তিনি শুরুতে রানিকে এই অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান। জবাবে রানি জানতে চান, ওসামা কী করেন। নিজের কাজের বিবরণ দিলে রানি বলেন, ‘ভালো কাজগুলো চালিয়ে যাও। তোমাদেরই আগামীর বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে হবে। শুভকামনা।’ অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ শেষে আবার রানির সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিদায় নেন ওসামা।
অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন প্রিন্সেস ডায়ানার ছোট ছেলে প্রিন্স হ্যারি, সাবেক ইংলিশ ফুটবল তারকা ডেভিড বেকহাম, শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট তারকা কুমার সাঙ্গাকারা, কমনওয়েলথসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্মকর্তারা। ওসামা বলেন, ‘প্রিন্স হ্যারি আমাদের দিকে এগিয়ে এসে মজা করে বললেন, রানির সামনে তোমরা বেশ নার্ভাস ছিলে। তবে চিন্তার কারণ নেই, রানির সঙ্গে ঠিকঠাকমতোই আচরণ করেছ তোমরা।’

অনুষ্ঠানে এক সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় প্রিন্স হ্যারি অ্যাওয়ার্ড পাওয়া তরুণ নেতৃত্বের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা যেসব ভালো কাজ করছ, তা চালিয়ে যাও। আমরা তোমাদের পাশে থাকব, প্রয়োজনীয় সহায়তা দেব।’ রাজপ্রাসাদের অনুষ্ঠানে পাঁচজন অ্যাওয়ার্ডস বিজয়ীর কাজের ওপর একটি সংক্ষিপ্ত প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। যেখানে ওসামার গল্পটিও ছিল। বিষয়টি তাঁকে বেশ সম্মানিত করেছে বলে জানান ওসামা।

বাকিংহাম প্যালেসে অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করা ছাড়াও ওসামাসহ অ্যাওয়ার্ডস বিজয়ীরা লন্ডনে টুইটারের প্রধান কার্যালয়, বিবিসি একাডেমি, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়, কমনওয়েলথ কার্যালয়, অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মশালায় অংশ নেন। ২৪ জুন বারবিকিউ পার্টির মাধ্যমে এই তরুণ দলকে বিদায় জানানো হবে। ২৬ জুন দেশের উদ্দেশে যাত্রা করবেন ওসামা।

No comments

Powered by Blogger.